গল্পের বই পড়তে কে না পছন্দ করে? বড় থেকে ছোট সবাই গল্পের বইয়ের প্রতি এতটাই দূর্বল থাকে যে, যেখানেই গল্পের বই পাওয়া যায় সেই বইটা হাতে নিয়ে পড়া শুরু করে দেয়। আর সেটা শেষ না হওয়া পর্যন্ত কেমন যেন অসম্পূর্ণ বোধ হতে থাকে। বই মানুষের জ্ঞানের পরিধি বৃদ্ধি করে আর যোগায় মনের খোড়াক। ছোট শিশুদের বইগুলো বেশ অন্যরকম থাকে। অনেক রঙিন আর সুন্দর সব ছবির মাঝে অল্প কিছু কথা দিয়ে থাকে গল্পগুলো। যেন তারা ছবি দেখেই কল্পনার রাজ্যের পাখা মেলতে পারে।

ছোট শিশুদের নিজেদের আলাদা এক জগত আছে। যেখানে অনেকগুলো চরিত্র থাকে। খেয়াল করে দেখবেন ওদের হাতের সামনে খেলনাজাতীয় কিছু থাকলেই সেটা দিয়ে তারা নিজেরাই গল্প করছে। যদি কখনও তাদের গল্পটা আড়ি পেতে শোনেন, আপনি ভাবতেও পারবেন না ওরা এতটা সুন্দর আর মজাদার সব গল্প বানাতে পারে। এমন সব মজাদার যুক্তি আর কথা বলবে যে আপনি আড়াল থেকেই হেসে কুটিকুটি হবেন।

শিশুদের সাথে গল্পের বই তৈরির কাজ করতে গিয়ে এই অভিজ্ঞতা আমাদের অনেকবার হয়েছে। শিশুদের গল্প হয় যুক্তিহীন আর কল্পনায় মেশানো। বাস্তবতার সাথে সেটিকে মেলাতে গেলে বা সেটিকে বাস্তবধর্মী করতে যাওয়ার চেষ্টা করতে গেলেও সেটি শিশুর প্রতি অন্যায়।

বাচ্চাদের চিন্তা ভাবনা হয় একটু অন্য রকমের। তারা তাদের আশেপাশের অবস্থাকে নিজের মত করে আপন করে নেয় খুব সহজে। নেতিবাচক কোন কিছু তাদের কোমল মনে ভর করতে পারে না। সেই সহজ, প্রাঞ্জলতা ফুটে উঠে তাদের কথার মধ্যে দিয়ে, সাথে সাথে তাদের লিখনির মধ্যে দিয়েও।

আমাদের সবারই অনেকগুলো পছন্দের চরিত্র থাকে। সেগুলর মধ্যে ১/২ থাকে বেশী পছন্দের। আমরা দেখা যায়, অবচেতন মনে ঐ চরিত্রগুলোকে আমরা অনুসরণ করি বা তাদের মত করে অনেক কিছু কল্পনা করি যা কিনা বাস্তবের সাথে কোনই মিল থাকেনা। একবার ভাবুন, কল্পনার জগতটা কত সুন্দর এবং শক্তিশালী যে তার মায়া থেকে আমরা বড়রাও বের হয়ে আসতে পারি না।

গল্প লেখার মাধ্যমে বাচ্চাদের গঠনমূলক লেখার অভ্যাস গড়ে উঠে। ঐ গল্পগুলো শুনতে আমরা Kids Time চেষ্টা করেছি একটা জোন তৈরি করার। যেখানে কিনা বাচ্চারা তাদের মনের ভাবনা চিন্তাগুলোকে অনায়াসে প্রকাশ করতে পারে। তাদের কথা আগে শুনার চেষ্টা করা হয়। এরপর তাদের ভাবনাগুলোকে আরও গভীরভাবে বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করা হয়। এভাবেই সে যখন বিভিন্ন গল্প তৈরি করতে থাকে, সাথে সাথে তার মধ্যে গুছিয়ে লেখার বা বলার দক্ষতা তৈরি হয়।

উদাহরন স্বরূপঃ

আমাদের সেন্টারের একটা শিশু জলপরী খুব পছন্দ করে। সেও জলপরীর মত হতে চায়। এবং ওর গল্পটাও ছিল জলপরী নিয়ে। ওকে বলা হল, আচ্ছা আমরা তো অন্য কিছু নিয়েও গল্প লিখতে পারি তাই না? যেমনঃ রাজা ও রাজকন্যা নিয়ে লিখতে পারি। যেখানে তুমি হবে রাজকন্যা। সে বলল যে, হুম পারি। কিন্তু আমার জলপরী অনেক পছন্দ। ওকে আবার জিজ্ঞাসা করলাম আমরা কেন জলপরী তোমার এত পছন্দের? তার উত্তর ছিল, আমার খুব জানতে ইচ্ছা করে, ঐ সাগরের নিচে কি থাকে? তারা কিভাবে খায়? তারা তো পানির নিচে থাকে, তারা গোসল করে কিভাবে? তারা কোথায় কোথায় বেড়াতে যায়?

ওর প্রশ্নগুলো শুনে আসলেই একটু অবাক হওয়ার মত। কতটা সহজ জিজ্ঞাসা। কিন্তু আমরা বড়রা কখনও কি পারি এইভাবে চিন্তা করতে?

আমরা শেষ পর্যন্ত তার সাথে জলপরী নিয়েই একটি গল্প তৈরি করি। একইভাবে শিশুদের বিভিন্ন পছন্দের চরিত্রগুলো নিয়ে তারা যদি গল্প বানাতে চায়, আমরা সেসব নিয়ে শেষ পর্যন্ত একটি পরিপূর্ণ গল্পের বই তৈরি করে ফেলি। এখন পর্যন্ত ৬৫ জন শিশু তাদের গল্পের বই প্রকাশ করেছে যেগুলো এখন আমাদের ওয়েবসাইটে পাওয়া যায়।                                     

এছাড়া অভিভাবকরা অনেকেই আমাদের কাছে বয়স উপযোগী গল্পের বই নেন। আমাদের এরকম বাছাই করা প্রায় ২৫০ গল্পের বইয়ের সিরিজ আছে বিভিন্ন বয়সের শিশুদের জন্য। কিন্তু মনে রাখবেন কেবল গল্পের বই কিনে শিশুদের দিয়ে দেয়ার মধ্যেই কিন্তু আপনার দায়িত্ব শেষ নয়। বিশেষ করে যেসব শিশুরা এখনও নিজে নিজে বই পড়তে পারে না তাদের ক্ষেত্রে কিছু নিয়ম আছে গল্পের বই শিশুদের পরে শুনানোর। এই নিয়মগুলো মেনে চলে গল্পের বই পড়ালে শিশুর মধ্যে দ্রুত পড়ার দক্ষতা তৈরি হবে, এবং একই সাথে তার মধ্যে সৃজনশীলতা, কৌতুহলি মনোভাব সৃষ্টি হবে – যা কিনা তার ভবিষ্যতের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ।

শিশুদের গল্পের বই পড়ে শুনানোর নিয়মের উপর আমাদের প্রকাশিত আর্টিকেলটি পাবেন এখানে।

লিঙ্ক

শিশুদের এই natural গল্প বলতে পারার ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়েই আমরা আমাদের Storymaking Course টি রেখেছি যেখানে শিশুরা নিজেদের গল্প তৈরি করে। সেগুলোর প্রতি পাতার ছবি আঁকে। সেই ছবি আঁকতে গিয়েও তাদের শেখা হয় কিভাবে কোন একটা ঘটনাকে ছবিতে আনা যায়। এর ফলে তার সৃজনশীলতা আরও বাড়ে। সবশেষে প্রতিটি শিশুর গল্পের বইগুলোকে আমরা ই-বুক হিসাবে তৈরি করে আমাদের ওয়েবসাইটে দিয়ে দেই যেন দেশের হাজার হাজার অভিভাবকরা তাদের শিশুদের জন্য এই গল্পের বইগুলো ডাউনলোড করে পড়াতে পারে। আর যে শিশু এই গল্পটি লিখে তাকে একটি বই প্রিন্ট করে উপহার দেয়া হয় তার গ্রেজুয়েসন প্রোগ্রামের সময়।

শিশুদের তৈরি গল্পের বইগুলো পাবেন এখানে 

এই ভিডিওটি দেখে আপনারা বুঝতে পারবেন কিভাবে আমরা শিশুদের গল্পের বই তৈরি এই কোর্সটি করাই।

Kids Time Storytelling Course Video

এই ভিডিওটি দেখে হয়তো আপনি নিজেও বাসায় আপনার শিশুর সাথে এমনভাবে তার সাথে গল্প তৈরি করা বা গল্পের বই তৈরি করতে পারেন।

Kids Time একটি after-school প্রোগ্রাম যেখানে বাচ্চাদের এই সুপ্ত প্রতিভাগুলোকে বের করে আনার জন্য কাজ করে যাচ্ছে নিরলসভাবে। বাচ্চাদের ভবিষ্যৎ স্কিল যেমন – Creativity, Problem Solving Skill & Emotional Intelligence বাড়াতে কাজ করছে কিডস টাইম। World Bank এবং World Economic Forum এর জরিপে এগুলো হচ্ছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ Future Skills যেগুলো শিশুর ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে সবচেয়ে বেশি কার্যকর হবে। আমাদের পরিচালিত অভিভাবক সার্ভেতেও ৬০% অভিভাবক মতামত দিয়েছেন যে সৃজনশীলতা তাদের সন্তানদের ‘Academic Result’ এর চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন শিশুর ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে। 

………………………………………………………………………………………………………

আমাদের Kids Time সেন্টারগুলোতে ভর্তি চলছে। আপনার শিশুকে নিয়ে আপনার কাছের সেন্টারটিতে চলে আসুন যেকোনো শুক্র-শনিবার। তার আগে নিচের ছবিতে ক্লিক করে রেজিস্ট্রেশন করে ফেলুন। 

আবেদন করার লিঙ্ক 

Parenting এর উপর আমাদের অনলাইন কোর্স শুরু হয়েছে আমাদের Teachers Time এর পোর্টালে। রেজিস্ট্রেশন করে কোর্স করতে পারুন যেকোনো সময় আপনার স্মার্টফোন থেকেই। নিচের ছবিতে ক্লিক করে চলে যান সরাসরি রেজিস্ট্রেশন লিঙ্কে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *