আপনি যদি গুগলে খুঁজতে যান ‘Happiest children on earth’ বা ‘Happiest parents in the world’ – দুই ক্ষেত্রেই একটা দেশের নাম উঠে আসবে। সেটা হচ্ছে নেদারল্যান্ডস। হ্যাঁ, ফুটবলের পরাশক্তি, কমলা জার্সির দল, যারা টোটাল ফুটবলকে বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় করেছে – সেই দেশ। অনেকেই এই দেশকে চিনেন হল্যান্ড হিসাবেও। 

২০০৭ সাল থেকে প্রতি বছর এই দেশের অভিভাবকরা এবং শিশুরা পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী অভিভাবক ও শিশু হিসাবে মনোনীত হয়ে আসছে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, কেন? এর পেছনে মূল রহস্য কোথায়? 

এর উত্তর পাঠককেই খুঁজে নিতে বলছি। কিন্তু কেবল দুইটা বিষয় তুলে আনছি যেটা আমাদের দেশের অভিভাবকদের জন্য প্রযোজ্য। প্রথমটা হচ্ছে, ডাচ অভিভাবকদের দুজনেই – বাবা ও মা শিশুকে অনেক সময় দেয়। দ্বিতীয়টা হচ্ছে, ডাচ শিশুদের অভিভাবকরা স্কুলে খুব ভালো রেজাল্ট করতে হবে, পরীক্ষায় সেরা হতে হবে – এই ধরনের কোন প্রেশার দেন না।  

তাই ডাচ শিশুরা যে কেবল সবচেয়ে সুখী থাকে তা নয়, বরং বড় হয়ে সফলও হয় নিজেদের ক্যারিয়ারে। এবং এই ধরনের একটা কালচার গড়ে উঠার কারণেই ডাচ স্কুলরাও শিশুদের রেজাল্টের উপর অতিরিক্ত প্রেশার দেয় না। 

পরবর্তীতে এই সফলতার কথা বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ে। এবং এটাকে এখন একটা টার্মে সবাই চিনে, ডাচ ওয়ে অফ প্যারেন্টিং বা ডাচদের মতো প্যারেন্টিং।

শিশুর বিকাশে সাথে আছে Teachers Time

লাইট অফ হোপের ফাউন্ডার ওয়ালিউল্লাহ ভূঁইয়া ২০১৭ সালে প্রথম ডাচ প্যারেন্টিং এবং এর সফলতার কথা জানতে পারেন। তখন থেকেই বাংলাদেশের অভিভাবকদের মানসিকতা, আমাদের দেশের শিক্ষাব্যবস্থা এবং সামাজিক প্রেক্ষাপট বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেন, আমাদের দেশের শিশুদের একটা সুন্দর ভবিষ্যৎ দিতে অভিভাবক ও শিক্ষকদের সাথে কাজ করা ছাড়া বিকল্প নেই।  

একটা শিশু জন্মের পর প্রথম ৩-৪ বছর ঘরে থাকে। বাবা-মার কাছে। এরপর সে স্কুলে যায়। স্কুলে ভর্তি হওয়ার পর শিশুটি শিক্ষকদের কাছে পরবর্তী ১২ বছর কাটায়। এই ১২ বছরেই শিশুটির ভবিষ্যৎ কেমন হবে সেটা ঠিক হয়ে যায়। 

আমাদের দেশের ভবিষ্যৎ জেনারেশন কেমন হবে সেটা নির্ধারণ করে এই দুইটা গ্রুপ। অভিভাবক আর শিক্ষকরা। বাবা-মা হচ্ছে সন্তানের প্রথম আর সবচেয়ে গুরুত্বপুর্ণ শিক্ষক। এই কারণেই অভিভাবক ও শিক্ষকদের প্লাটফর্মের নাম দিয়েছি আমরা টিচার্স টাইম ২০১৮ সালে লাইট অফ হোপ থেকে শুরু হয় টিচার্স টাইমের যাত্রা। মূল লক্ষ্য ছিল, বাংলাদেশের অভিভাবকদের সচেতন করা, তাদেরকে বিভিন্ন ধরনের প্যারেন্টিং কোর্স করানো। যেন অভিভাবকরা বাসায় নিজেদের শিশুদেরকে সঠিকভাবে গাইড করতে পারে। দ্বিতীয় লক্ষ্য ছিল, শিক্ষকদের – বিশেষ করে প্রি-স্কুল ও প্রাথমিক লেভেলের শিশুদের শেখান এমন শিক্ষকদের বিভিন্ন প্রশিক্ষণ করানো।

Teachers Time-এর সার্টিফিকেট কোর্স

এই কারণেই দেশের সেরা  ECD Expert, Education Expert, Child Phycologists দের নিয়ে এই টিচার্স টাইম একটা প্লাটফর্ম তৈরি করেছে যেন শিক্ষক আর অভিভাবকরা সরাসরি শেখার সুযোগ পান দেশের সেরা এক্সপার্টদের থেকে। 

২০১৮ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ত্রিশ হাজারের বেশি সরকারী, বেসরকারি, কিন্ডারগার্টেন, ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের শিক্ষক ও দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অভিভাবকরা টিচার্স টাইম থেকে বিভিন্ন কোর্স ও প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। এখান থেকে এখন ২ মাসের সার্টিফিকেট কোর্সও করানো হচ্ছে। পাশাপাশি নিয়মিত হচ্ছে বিভিন্ন ওয়ার্কশপ। 

নভেম্বর ২০ তারিখে আছে বিশ্ব শিশু দিবস। এই উপলক্ষে Teachers Time বিভিন্ন কাজ করছে অভিভাবক ও শিক্ষকদের জন্য। ওয়েবসাইটের সকল কোর্স সম্পুর্ণ ফ্রি করে দেয়া হয়েছে ২ মাসের জন্য। যেন এতে করে যেকোনো শ্রেণীর অভিভাবক, কিন্ডারগার্টেন, মাদ্রাসা, কিংবা নন-প্রফিট স্কুল যারা পরিচালনা করছেন, তারা যেন দরকারি কোর্সগুলো সহজেই করতে পারেন। 

পাশাপাশি স্পেশাল শিশু, অটিস্টিক শিশুদের অভিভাবকদের জন্য বিশেষ ওয়ার্কশপ, প্রশিক্ষণ আয়োজন করা হচ্ছে। এগুলো সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানা যাবে তাদের ওয়েবসাইট থেকে টিচার্স টাইম.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *