অনেক অভিভাবকরা যদিও বুঝতে পারছেন গল্পের বই পড়ার উপকারিতা সম্পর্কে, কিন্তু অনেক সময় দেখা যাচ্ছে সমস্যাটা থেকে যাচ্ছে শিশুর দিক থেকে। স্মার্টফোন, কার্টুন আর মোবাইল গেমের কারণে অনেক শিশুর মধ্যে বই পড়ার অভ্যাস হারিয়ে যেতে বসেছে। এরকম অভিযোগ আমরা প্রায়ই শুনি অভিভাবকদের কাছ থেকে। আজকের লেখার আমরা বলেছি এমন ৭ টি ধাপের কথা যার মাধ্যমে আপনি আপনার শিশুর মধ্যে বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে পারেন।
বই পড়াকে আমরা সবসময় একটু অন্যভাবে দেখি। একবার ভাবুন তো, সাদা পৃষ্ঠায় কালো কালিতে দেয়া আঁচড়গুলোর উপর দিয়ে চোখ বুলিয়ে যাবার সময় আমরা কিভাবে অন্য এক জগতে হারিয়ে যাই, চোখ বুজলেই যেন দেখতে পাই চরিত্রগুলোকে। এখানে মূল সার্থকতা লেখকের হলেও পাঠকের কল্পনাশক্তি ব্যতীত এ অসাধ্য সাধন হতে পারে না। তাইতো আমরা নতুন প্রজন্মকে এই অসাধারণ কল্পনাশক্তির বীজ তুলে দিতে চাই তার পাঠের অভ্যাস গড়ে তোলার মাধ্যমে।
শিশুকে বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে পারলে কি উপকার পাবেন সেটি নিয়ে আরও জানতে চাইলে পড়ে ফেলুন আমাদের এই লেখাটি।
“একজন মানুষ ভবিষ্যতে কী হবেন সেটি অন্য কিছু দিয়ে বোঝা না গেলেও তার পড়া বইয়ের ধরন দেখে তা অনেকাংশেই বোঝা যায়।” – অস্কার ওয়াইল্ড
পাঠ্যপুস্তককেও এরকম আনন্দদায়ক করে তোলা যায় পাঠকের কল্পনাশক্তির মাধ্যমে। আজকের তরুণ শিক্ষার্থীরা যে পড়ার বইয়ে মনোযোগ রাখতে পারে না, তার মূল কারণ এটাই – তাদের বই পড়ার অভ্যাসের অভাব। এ অভ্যাস গড়ে তোলার জন্য একদম ছেলেবেলা থেকেই বইয়ের প্রতি ভালবাসা গড়ে তুলতে হবে। আর এজন্য বাচ্চাদের অভিভাবক হিসেবে আপনার দায়িত্ব শুরু হয়ে যাবে আপনার শিশুটি কথা বলতে শুরু করার সাথে সাথেই।
এরকম ৭ টি উপায়ে আপনি বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে পারেন আপনার শিশুর মধ্যেঃ
১। শিশুর মনে ‘কি‘ প্রশ্নটি জাগ্রত রাখুন সর্বদা
একটু শিশু সর্বপ্রথম যে অর্থবোধক শব্দটি উচ্চারণ করতে শেখে তা হচ্ছে “মা”। এর পরপরই যা বলতে শেখে তা সম্ভবত “কি” শব্দটি। সে যখনি কিছু দেখে সে জানতে চায় “এটা কি?”, “তাহলে ওটা কি?” সে একটু বড় হলেই আশেপাশের সবকিছু নিয়ে জানতে চায়; তার চোখে থাকে রাজ্যের বিস্ময়। এসময় আপনার কাজ হবে তার এই ‘কি’ প্রশ্নের ক্রমাগত উত্তর দেয়া। এখানে লক্ষ্য রাখার বিষয় হচ্ছে তার প্রশ্নের উত্তর দিতে দিতে যেন আপনি ক্লান্ত হয়ে না যান, এবং রেগে গিয়ে তাকে ধমক না দেন। ভাবছেন, এই ‘কি’ প্রশ্ন জাগিয়ে রাখার সাথে বই পড়ার কি সম্পর্ক? আপনি তার এই উৎসুক মনটার সাহায্য নিয়েই তার সাথে বইয়ের সম্পর্ক জুড়ে দিতে পারেন খুব ছোট বয়সেই! আপনি তার এই জানার আগ্রহের সাহায্য নিয়েই তার হাতে তুলে দিতে পারেন মজার মজার সব বই যা পড়ে তার জানার পরিধি এবং বইয়ের প্রতি ভালবাসা বাড়বে।
২। নিয়মিত পড়ার আগ্রহ গড়ে তুলুন একটু ভিন্নভাবে
যখন সে আশেপাশের সবকিছুর সাথে বইয়ের মিল খুঁজে পাবে, তখন সে আপনা আপনিই বইয়ের সাথে লেগে থাকবে দিনরাত, অনেকটা সময় কাটাবে ছবিগুলো চিহ্নিত করতে করতে।
এখন আপনার কাজ হবে তার জন্য নতুন নতুন বই কিনে আনা। দেখবেন, এতে করে দেখবেন নতুন আসার পূর্বেই সে আগের বইগুলো আপাদমস্তক দেখে ফেলেছে, এবং নতুন বই আসার জন্য দারুণ উদ্যমে অপেক্ষা করছে! এভাবে তার মনের অজান্তেই আপনি বইয়ের সাথে এক অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক সৃষ্টি করে দিচ্ছেন যা আজীবন তাকে সাহায্য করবে।
শিশুর বয়স যদি ২-৬ বছরের মধ্যে হয় তাহলে নিয়ম করে প্রতিদিন ঘুমাতে যাওয়ার আগে একটি করে গল্পের বই তাকে পড়ে শুনান। সারাদিন নানা কাজ করে ক্লান্ত শরীরে হয়তো ভাবেন একটু বিশ্রাম নিবেন। কিন্তু ভেবে দেখুন প্রতিদিন কিন্তু শিশু ঘুমের সময় আপনি তার সাথেই শুয়ে সাধারণত ঘুম পাড়ান। এই কাজটিই এখন শুধু করুন – কেবল ঘুমানোর আগে ১৫ মিনিটে হলেও একটি বই তাকে পড়ে শুনান। এতে করে তার স্মার্টফোন বা কার্টুনের প্রতি আকর্ষণ কমতে থাকবে এবং আপনিও শিশুর সাথে চমৎকার কিছুটা সময় কাটাতে পারবেন।
৩। জন্মদিন বা অন্য কোন উৎসবে বই উপহার দিন
আমরা ছোটবেলা আমাদের জন্মদিনে প্রায়ই বই উপহার পেতাম। এখন আজকাল আর জন্মদিনে শিশুকে বই উপহার দেয় না। দামি আর ঝকঝকে খেলনা কিনে দিতেই সবার ঝোঁক। অথচ এক জন্মদিনে যদি আপনি ৪-৫ হাজার টাকার বই নিজে কিনেন অথবা উপহার হিসাবে অন্য কাউকে দেন, সেটি দিয়ে ৩-৬ বছর বয়সের একটি শিশুর প্রায় এক বছরের বইয়ের চাহিদা মিটিয়ে ফেলা যায়।
আগামী জন্মদিনে তাই আপনার শিশুকে বই কিনে দিন। অন্য কারোর জন্মদিনে গেলে তাকে বই উপহার দিন।
এছাড়া শিশু পরীক্ষায় ভালো করলে, তার কোন কাজে খুশি হয়ে কোন উপহার দিতে চাইলে তাকে বই কিনে দিন। এতে করে আপনার সন্তানও বইয়ের প্রতি আপনি যে অনেক গুরুত্ব দিচ্ছেন সেটি বুঝবে এবং ধীরে ধীরে নিজের মধ্যেও বইয়ের প্রতি ভালোবাসা তৈরি হবে।
৪। সঠিক বইটি আপনার শিশুর জন্য বাছাই করুন
অনেক সময় শিশুরা বই পড়ার আগ্রহ হারিয়ে ফেলে কারণ বইগুলো তাদের বয়স উপযোগী হয় না। তাই সঠিক বইটি বাছাই করা অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। আমরা দেশের সব ভালো ভালো শিশুতোষ প্রকাশনীর বই ঘেঁটে ২০০ বইয়ের একটি তালিকা তৈরি করেছি বয়স এবং বিষয়ের উপর ভিত্তি করে। বই কেনার সময় এই তালিকাটি ফলো করতে পারেন।
শিশুর বয়স যদি ৪-৫ বছরের নিচে হয় তাহলে এমন বই কিনুন যেখানে একটি পৃষ্ঠায় ৩-৪ লাইন করে থাকে। ছোট শিশুদের জন্য আরও কম লাইন হলে ভালো। কালারফুল বই হতে হবে অবশ্যই। লেখার ভাষা হতে হবে খুব সহজ।
আমাদের পরামর্শ হবে আমাদের তালিকাটি ফলো করে কিনতে থাকুন। এক সময় আপনিই বুঝে যাবেন কি ধরণের বই আপনার শিশুর জন্য কিনতে হবে।
৫। সঠিক নিয়মে বই পড়ে শুনান
অনেক সময় সঠিক নিয়মে বই পড়ে না শুনানোর জন্য শিশুদের মধ্যে বই পড়ার আগ্রহ তৈরি হয় না অথবা কিছুদিন পর মরে যায়। শিশুদের কিন্তু কোন বিষয়েই বেশিদিন মনোযোগ থাকে না। তাই নতুন ধরণের বই দিতে হবে। আর সবচেয়ে বড় ব্যাপার হচ্ছে, তাকে সঠিক নিয়মে বই পড়ে শুনাতে হবে। আপনি তাকে যখন বইয়ের পাতা উল্টিয়ে উল্টিয়ে পড়াবেন তখন আপনি আপনার কণ্ঠের উঠানামার দিকে খেয়াল রাখুন। শিশু যেন আপনার কথা অনুযায়ী কল্পনা করতে পারে মনে মনে বইয়ের ঘটনা।
সঠিক নিয়মে শিশুদের বই পড়ানোর উপর আমাদের আরেকটা বিস্তারিত লেখা আছে। সেটি পড়ে ফেলুন এই লেখাটি শেষ করার পর।
লেখাটি পাবেন এই লিঙ্কে।
৬। প্রতি মাসে শিশুকে একবার বই কিনতে নিয়ে যান
এই অভ্যাসটি গড়ে তুলতে পারলে আপনার শিশুটি পাঠক হওয়ার পথে অনেকদূর এগিয়ে যাবে। সপ্তাহের বন্ধের দিনগুলোতে আপনার সন্তানকে নিয়ে বিভিন্ন বইয়ের দোকান থেকে ঘুরে আসুন। এতে করে সে যেমন নতুন বইয়ের ঘ্রাণ পাবে যা তাকে বইয়ের প্রতি আরো আগ্রহী করবে, একই সাথে বইয়ের দোকান এবং লাইব্রেরিতে যাওয়ার প্রতিও আগ্রহী করবে। প্রতি সপ্তাহে না পারলে তাকে অন্তত প্রতি মাসে একবার বই কিনতে নিয়ে যান। ঢাকার অভিভাবকদের জন্য বই কিনতে যাওয়াটা অনেক সহজ হয়তো। ঢাকায় পাঠক সমাবেশ, বেঙ্গল বইয়ের মতো কিছু চমৎকার জায়গা আছে যেখানে বই কেনার পাশাপাশি শিশুকে কিছুক্ষণ সময় বই পড়ার সুযোগও দিতে পারেন। হয়তো একটা দুইটা বইই কিনবে, কিন্তু অনেক অনেক বইয়ের সাথে সময় কাটানোর এই সুযোগের কারণে বইয়ের প্রতি তার আগ্রহ আরও বাড়বে।
যারা ঢাকার বাইরে থাকেন তারা অনেক সময় ভালো বইয়ের দোকান পান না খুঁজে, তারা চাইলে অনলাইনে শিশুতোষ বই স্বল্পমূল্যে অর্ডার করতে পারেন Togumogu থেকে। নিচের এই লিঙ্কে ক্লিক করে আপনি শিশুদের বয়স উপযোগী ২০০ বইয়ের একটি তালিকা পাবেন। ১৪-১৫ টি সিরিজ আকারে বইগুলো আছে। সেই অনুযায়ী আপনি আপনার শিশুর জন্য অর্ডার করতে পারেন।
৭। নিজস্ব বইয়ের সংগ্রহ গড়ে তুলতে সাহায্য করুন
আপনার বইয়ের তাকটি যদি আপনার পছন্দের বইয়ের সংগ্রহে পূর্ণ থাকে, সে নিজেও তার ব্যক্তিগত লাইব্রেরি তৈরি করতে ইচ্ছুক হবে । তার রুমে একটি বইয়ের তাক রাখুন অথবা তাকে আপনার নিজের বইয়ের তাক/আলমারি থেকে কিছু জায়গা করে দিন। সে হয়ত সযত্নে তার পছন্দের বইগুলো তার জন্য রাখা জায়গাটিতে সাজিয়ে রাখবে। এতে করে সে বইয়ের যত্ন নেয়া শিখবে এবং বই পড়ার প্রতি আরো বেশি আগ্রহী হবে।
সন্তানের নিজের যদি কোন রুম থাকে তাহলে সেখানে ৪-৫ হাজার টাকা দিয়ে একটা বইয়ের তাক বানিয়ে দিন বা কিনে ফেলুন। সেখানে তার জন্য আস্তে আস্তে বই কিনে জমিয়ে রাখুন। এতে করে প্রতিদিন অন্তত সে একটি বই পড়বে।
এভাবে আপনার সন্তানের বয়স যখন ৬-৭ এ পৌঁছবে তখন দেখবেন আপনার সন্তান লিখিত যা কিছু পাচ্ছে তাই-ই পড়তে শুরু করছে। বয়স ৮-৯ এ পৌঁছে গেলে দেখবেন আপনার সন্তান এখন একজন নিয়মিত পাঠক। এটি করতে পারলেই আপনার শিশুর পড়াশুনা এবং ভবিষ্যৎ নিয়ে আপনার ভাবনা অনেক কমে যাবে।
প্রতি মাসে সন্তানের পিছনে প্রাইভেট পড়ানো, স্কুলের বেতন থেকে শুরু করে অনেক কিছুর জন্য আমরা কত না ব্যয় করি। আজকে থেকে যদি একটা উদ্যোগ নেন তাহলে আগামী ৫-৬ মাসের মধ্যে আপনি একটি চমৎকার লাইব্রেরি তার জন্য করে দিতে পারেন। ১০০-১৫০ বই যদি আপনি ধাপে ধাপে কিনেন তাহলে আপনার হয়তো ১০-১৫ হাজার টাকা খরচ হবে। কিন্তু এটি আপনার সারাজীবনের সঞ্চয় হয়ে থাকবে।
আপনার শিশুর মানসিক বিকাশের কথা বিবেচনা করে আমাদের বাছাই করা ৩-১০ বছর বয়সী শিশুদের জন্য ২০০+ টি বইয়ের মোট ১৪ টি সিরিজ।
বইগুলোর বিস্তারিত দেখতে ক্লিক করুন ছবিতে।
এই বইয়ের সিরিজগুলো আপনি পাবেন Togumogu থেকে। নিচের ছবিতে ক্লিক করে চলে যান সরাসরি তাদের ওয়েবসাইটে। সেখান থেকে পছন্দমতো সিরিজ বাছাই করে অনলাইনেই অর্ডার করতে পারেন অথবা সরাসরি তাদের ফেসবুকে ইনবক্স করুন আপনি কোন সিরিজটি নিতে চান জানিয়ে। তারা আপনাকে কল করে আপনার ঠিকানায় বই পৌঁছে দেয়ার ব্যাবস্থা করবে। সাড়া দেশে বই তারা ফ্রি ডেলিভারি দেয়।
পছন্দের বইয়ের সিরিজটির কথা ইনবক্স করুন Togumogu ফেসবুক পেজে।
………………………………………………………………………………………..
কিডস টাইমে আমাদের সাথে সরাসরি কথা বলুন এই নাম্বারেঃ 01771588494
উইন্টার ব্যাচ জানুয়ারি ২০২০ সেশনে ভর্তির জন্য নিচের ছবিতে ক্লিক করুন